এম আর সজিব, সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা  :

মোঃ কামিল আলী নামে ১৩ বছরের এক কিশোরকে ২০ বছরের যুবক সাজিয়ে ছাতক থানা পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক মিথ্যা চুরির মামলায় ফাসিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করায় নির্যাতিত ঐ কিশোরকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

পাশাপাশি নির্যাতিত কিশোরের সুচিকিৎসার জন্য বিজ্ঞ আদালত,জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপ-পরিচালক,সিভিল সার্জন ও জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা যায়,সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের সব্জি ব্যবসায়ী রমিজ আলী ছাতক পৌর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তার ব্যবসা পরিচালনার জন্য তিনি ছাতক উপজেলার কালারুখা ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের আব্দুল হামিদ ওরফে সুহেল মিয়ার পুত্র কামিল আলী (১৩) কে কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত করেন। কিন্তু সব্জি ব্যবসার আড়ালে দোকান মালিক রমিজ আলী ও তার ছেলেরা ইয়াবা ব্যবসা করে যাচ্ছিলো।

কর্মচারী কামিল আলীকে দিয়ে ইয়াবা ও মদ ব্যবসার মালামাল পরিবহনকালে হঠাৎ একদিন মাদকের কার্টূন তার মাথা থেকে রাস্তায় পড়ে যায়। তখন শিশু কামিল রাস্তায় পড়ে যাওয়া মালামাল উঠিয়ে দোকানে গিয়ে মালিককে কেন তাকে অনৈতিক ব্যবসায় নিয়োগ করেছে বলে কৈফিয়ত চাইলে দোকান মালিক রমিজ আলীগং তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে বিষয়টি কাউকে না বলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু নাছোড়বান্ধা কামিল আলী টাকার লোভে সাড়া না দিয়ে কথিত চাকরী ছেড়ে বাড়ীতে চলে যায়। কামিলের মা বাবা তাকে চাকুরীতে যাওয়ার জন্য চাপপ্রয়োগ করলে সে ঘটনার কথা বাধ্য হয়ে তাদেরকে প্রকাশ করে।

এদিকে দোকান মালিক রমিজ আলী কিশোর কামিল আলীকে তার বাড়ীতে গিয়ে তার মা-বাবাকে টাকার লোভ দেখিয়ে দোকানে ফিরিয়ে আনে। একপর্যায়ে গত ৩০ জুন সকাল ৮টায় উত্তেজিত রমিজ আলী ও তার ছেলেরা ইয়াবা ব্যবসার গোপন তথ্য ফাস করায় কিশোর কামিল আলীকে বেদম মারপিটক্রমে গুরুতর আহত করে একটি বিল্ডিং এর তিনতালা থেকে নীচে কাদায় ফেলে দেয়। পরে কাদা থেকে তুলে পানি দ্বারা ধৌত করে আবার উপর্যুপরী মারপিট শুরু করে ঐ কিশোরকে। লাঠি রুইল জুতা হকিষ্টিক ইত্যাদি দ্বারা শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও জাম্বুরা দ্বারা কানের এবং নাকের লথি পর্যন্ত ছিড়ে নেয় ইয়াবা ব্যবসায়ী নির্যাতনকারীরা।

মারপিটের একপর্যায়ে ঘটনার মূল রহস্য আড়াল করে প্রতারক রমিজ আলী তার ছেলে মোস্তাকীম আলীকে বাদী সাজিয়ে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন কল্পকাহিনী  দ্বারা ছাতক থানায় মামলা নং ০১ (জিআর ১৮৯/২৫) ধারা ৩৮০ দায়ের করে। ছাতক থানা পুলিশ মোটা অংকের টাকা উৎকোচের বিনিময়ে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে শিশু কামিল আলীকে ২০ বছরের যুবক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা এফআইআর করে।

পরদিন ঐ শিশুটিকে ছাতক থানা ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ  (বিপি নং ৭৮০৪১১২৪০০) ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (বিপি নং ৬৯৮৮০১১৭৭১) কথিত মিথ্যা মামলায় থানা থেকে কোর্টহাজতে প্রেরণ করেন। এদিকে শিশু কামিল আলীকে শিশু আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ গত ১লা জুলাই কথিত মিথ্যা মামলার আসামী শিশু কামিল আলীকে জামিন প্রদান করেন।

জামিন প্রদানকালে বিজ্ঞ বিচারক বলেন,উপস্থাপিত শিশুর শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে নির্যাতন করার কারণে আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান রয়েছে। অভিযুক্ত শিশু কোন ধরনের অপরাধ কর্মে জড়িত হলেও তাকে শারীরিক নির্যাতন করার অধিকার কারো নেই। অধিকন্তু অনুরুপ কার্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযুক্ত মোঃ কামিল আলীকে শারীরিক নির্যাতন কাজে কারা জড়িত তা সরজমিনে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করত: আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অত্র আদালতকে অবহিত করার জন্য সহকারী পুলিশ সুপার ছাতক (সার্কেল) সুনামগঞ্জকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এদিকে আশপাশের ব্যবসায়ীরা বলেন, কিশোর কামিল আলীকে তার দোকান মালিক ও দোকান মালিকের ছেলেরা প্রকাশ্য দিবালোকে নির্যাতন করেছে। এরা যেমন ঐ কিশোর নির্যাতনের জন্য দায়ী তেমনি দায়ী ছাতক থানার ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা যারা মোটা অংকের টাকা ঘুষের বিনিময়ে একজন নিরীহ কিশোরকে মিথ্যা চুরির মামলায় ফাসিয়ে প্রকৃত অপরাধীদেরকে আড়াল করেছে। আমরা ছাতক উপজেলাবাসী উক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। গঠনার স্হলের লাগা ব্যবসায়ী ফয়জুন্নুর বলেন ২ টা ছেলেকে বাবা ছেলে তিন জনে মারিয়া জায়গায় প্রশ্রাব পায়খানা করাইছে,এরকম গৃন্যকাজ জীবনে ও দেখিনাই।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চেয়ে ছাতক থানার এসআই গাজী মোয়াজ্জেম হোসেনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন,মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। শুধু জানি তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এফআইআরে আমার নাম দেয়া হয়েছে। সবকিছু ওসি সাবের নির্দেশমতে হয়েছে। ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এই মামলার ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই গাজী মোয়াজ্জেম হোসেন সবকিছু বলতে পারবে।

তিনি আরো বলেন,তবে আদালতের নির্দেশে রোববার (৬ জুলাই) এএসপি সার্কেল ছাতক থানায় এসে বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দিরাই সার্কেল) মোঃ শরিফুল হক বলেন,বিজ্ঞ আদালত আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আমি রবিবার (৬ জুলাই) ছাতক থানায় সরজমিনে গিয়েছি। তবে বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন তাই তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে যাচ্ছিনা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে শিশু নির্যাতনকারীর প্রত্যক্ষ সহযোগী ছাতক থানার ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উর্ধতন পুলিশ প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।

Exit mobile version