মো: ইব্রাহিম খলিল, সাতক্ষীরা সংবাদদাতা :
সাতক্ষীরায় (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর যোগসাজশে সরকারি কাজে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের মেইন গেট সংলগ্ন ড্রেন নির্মাণ কাজ, শিশু পার্কের প্রাচীর মেরামত সহ উপজেলা ইউএনও’র বাসভবনের স্টেইননলেস স্টিল সিড়িঁ নির্মাণ কাজে সরকারি ভাবে বরাদ্দ আসে ২২ লক্ষ পনের হাজার ৩২০ টাকা। উপজেলা পরিষদের এই কাজের তদারকির দায়িত্বে আছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ ও উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী। এরই ধারাবাহিকতায় গত (২৯ মে) থেকে কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান– এম,এ, রব শাহীন।
স্থানীয়দের অভিযোগ: কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ড্রেন নির্মাণ কাজ এবং শিশু পার্কের প্রাচীর মেরামত কাজে খুবই নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পরিষদের গেট সংলগ্ন পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত ও নিন্মমানের ইট সহ নিন্মমানের বালু। এছাড়া ড্রেনের প্লাস্টার কাজে নিন্মমানের বালুর সাথে সীমিত পরিসরে সিমেন্ট ব্যাবহার করা হচ্ছে যা প্রাক্কলনের একেবারেই বিপরীত মুখি কাজ।
তারা আরও বলেন, শিশু পার্কের প্রাচীর মেরামত কাজে দেয়ালে প্লাস্টারে নিন্মমানের বালুর সাথে সীমিত পরিসরে সিমেন্ট মিশ্রনে কাজ করা হচ্ছে। ঠিকাদার কর্তৃক দায়সারা কাজ করায় কাঠামোগত ভাবে একেবারেই ঝুঁকিতে পড়েছে সরকারি এসব প্রকল্পের কাজ। এর ফলে একদিকে যেমন জনস্বার্থে টেকসই উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে অপরদিকে সরকারি টাকা অনেকাংশেই অপচয় হচ্ছে। কর্মকর্তাদের যোগসাজশ এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর সহযোগিতায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিন্মমানের দায়সারা কাজ করছে। এর কারন হিসেবে তারা বলেন: প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম,এ,রব শাহীন এর নিকট থেকে বরাদ্দের মোট টাকা থেকে ৫ পারসেন্ট হারে ঘুষ গ্রহণ করার মাধ্যমে নিন্মমানের কাজ করার সুযোগ সুবিধা তৈরি করে দিয়েছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে: বিগত ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ সালে ইয়াকুব আলী সাতক্ষীরা সদর (এলজিইডি) অফিসে উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
অভিযোগ আছে: সাতক্ষীরা সদর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী যোগদানের পর থেকে বেড়েছে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ বানিজ্য। প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী একাধারে একই কর্মস্থলে আড়াই বছরের অধিক সময়কাল থাকার সুবাদে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর ফলে সরকারি প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা এখন দুরভিসন্ধি হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলা (এলজিইডি) এবং ইউএনও অফিসের একেবারেই নাকের ডগায় চলছে এসব নিন্মমানের ড্রেন নির্মাণ ও প্রাচীর মেরামত কাজ।
কাজের তদারকি ও দেখভালের দায়িত্বে থাকা (এলজিইডি) অফিসের কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সঠিকভাবে মনিটরিং না করা, উদাসীনতা এবং গাফিলতিকেই দুষছেন অনেকেই। এদিকে দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময়কাল ধরে একই কর্ফমস্থলে উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী থাকার কারণে বাড়ছে নানাবিধ অপরাধ।
বিশেষজ্ঞদের মতে: দীর্ঘ সময় ধরে একই কর্মস্থলে থাকার কারণে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বেপরোয়া স্বভাবের হয়ে ওঠে। একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকার কারণে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে তাদের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এছাড়া কাজের সুবাদে অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয় যা কার্যত বিভিন্ন অপরাধ, অনিয়ম এবং দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়।
এছাড়া একই কর্মস্থলে বেশি দিন থাকার কারণে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের অনিয়ম আর অপরাধ ঢাকতে নানা প্রভাব বিস্তার করে থাকে যা জনদুর্ভোগ তৈরি করার পাশাপাশি সরকারি উন্নয়ন মূলক কাজকে বাধাগ্রস্থ করে। সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ গেট সংলগ্ন ড্রেন নির্মাণ কাজ, শিশু পার্কের প্রাচীর মেরামত কাজ চলমান। কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দায়সারা ভাবে কাজ করা, ড্রেন নির্মানের গাথুনিতে পরিত্যক্ত ইটের ব্যবহার, নিন্মমানের বালু সহ সীমিত পরিসরে সিমেন্ট ব্যবহার করে প্লাস্টার করতে দেখা যায়।
এছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম,এ,রব শাহীন কর্তৃক উল্লেখিত কাজ চলাকালীন সময় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সাতক্ষীরা সদর অফিসের কোন কর্মকর্তা এমনকি কোন কর্মচারীকে কাজের তদারকি কিংবা দেখভাল করার জন্য তাদের কোন উপস্তিতি চোখে পড়েনি।
এ বিষয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম,এ,রব শাহীন এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ হন। বলেন, ভাই আগামীকাল এসে আপনার সাথে কথা বলবো। এ বিষয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর সাথে একাধিক বার মুঠোফোনে আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, উপজেলা পরিষদের কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান করছে। আমি এবং উপজেলা প্রকৌশলী তদারকি করছি এটা ঠিক। তিনি বলেন, যদি কাজে কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীn মো: কামরুজ্জামান এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, এটা আমার দপ্তরের কাজ না, উপজেলা পরিষদের কাজ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা প্রকৌশলী এ ব্যাপারে ওনারা ভালো বলতে পারবেন।
এদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী কর্তৃক ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্বরত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ড্রেন নির্মাণ ও শিশু পার্কের প্রাচীর মেরামত কাজে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলেছে। দায়সারা নিন্মমানের কাজ করায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সহ অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের ব্যক্তি, সচেতন মহল সহ স্থানীয়রা।