মোঃমনির মন্ডল,সাভার সংবাদদাতা :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা: এনামুর রহমান নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত ছিলেন, আছেন তারা এবার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ফলে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো: তৌহিদ জং মুরাদ। তাই এই আসনে এবারের নির্বাচন শুরু থেকেই জমে উঠেছে। আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক বেশি আলোচিত এবং আলোকিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে তারা কোণঠাসা করে ফেলতে পারেন এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিরোধী দল বিএনপি ছাড়া একতরফা নির্বাচনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। নিজ দলের হেভিওয়েট নেতারা ঘোষণা দিয়ে এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নৌকার বিরুদ্ধে নিজ দলের নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিব্রত স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও। এ নিয়ে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ অনেক কর্মীসমর্থকরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন এখন কার পক্ষে কাজ করবেন। তবে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় উদ্যোগ না নিলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক জেষ্ঠ নেতা বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীই আওয়ামীলীগের। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও এখন বিভক্ত হয়ে গেছে। নির্বাচনে জয়ী হতে যে যারমতো কৌশল অবলম্বর করছেন। ফলে দলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসন থেকে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার আনোয়ার জং এর ছেলে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের হাতছাড়া হয় আসনটি। আর আহত শ্রমিকদের চিকিৎসাদিয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা: এনামুর রহমান হাল ধরেন এই আসনের।
দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রানা প্লাজা ধসের পর ভবন মালিক সোহেল রানাকে নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়ায় তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। তাঁর পরিবর্তে মনোনয়ন দেওয়া হয় বর্তমান সংসদ সদস্য ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানকে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে গত ১০ বছরে তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদকে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান ছাড়া রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ডে দেখা না গেলেও তার রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক।
তবে এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনটি তিনি ফিরে পেতে পারেন এমনি গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের মুঠফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সামাজিক মাধ্যমে তিনি ও তার কর্মী-সমর্থকরা সরব রয়েছেন।
অন্যদিকে আশুলিয়া থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ছিলেন ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে তিনি সম্প্রতি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন না পেয়ে গত সোমবার রাতে তার নিজ এলাকা পল্লীবিদ্যুত বাসস্ট্যন্ডে একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষনা করেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে আমি ঢাকা-১৯ আসনের জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমি মনোনয়ন পাইনি। তাই এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নিজেকে ঘোষণা করছি।
তবে সরেজমিনে ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে জানাগেছে, পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন আহমদ ভূঁইয়াসহ কয়েকজন নেতাকর্মী রয়েছে সাইফুলের সাথে।গামের্ন্টস শ্রমিকদের তার ভোটব্যাংক হিসাব করলেও মূলত অধিকাংশ শ্রমিকই সাভারের ভোটার নয়। তবে সাইফুলকে একবারও সাভার থানা এলাকায় দেখা মিলেনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের বিষয়ে সাভারের একাধিক নেতাকর্মীরা জানিয়েছে, যে প্রার্থী আশুলিয়া নিয়ে পরে থাকে সাভারের একবারের জন্যও আসেনা, সাভারের ভোটাররাও তাকে চেনে না সেই প্রার্থীকে সংসদ সদস্য হিসেবে কিভাবে ভোট দিবে। তাছাড়া সাইফুল ও তার বাহিনী নিয়ে এরআগে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তখন বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি। এসব বিষয় ভোটারদের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে সাভার ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, আশুলিয়া থানা এলাকায় সাইফুল ইসলামের চেয়ে তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের কর্মী সমর্থকের সংখ্যা কয়েকগুন বেশি। তাই নৌকার প্রার্থী ডা: এনামুর রহমানের পক্ষে বিজয়ী হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। যদিও এনামুর রহমান নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর সাভারের বিভিন্ন নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাদের নিয়ে গোপন বৈঠক করছেন। তবে পুরনো ও স্থানীয় নের্তৃবৃন্দ অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন দেয়ায় নৌকার প্রার্থী ডা: এনামুর রহমান অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। তার কাছ থেকে সরে পরেছেন অনেক চেনা মুখ। অনেক নেতা-কর্মীদের ভাষ্য এবারের নির্বাচনে তিনি আছেন বেকায়দায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভোটারের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করলে এবং সুষ্ট নির্বাচন হলে সাভারের আসনটি নিয়ে ভাবার বিষয় আছে। এই আসনটি আওয়ামীলীগের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বেশি।
ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনটি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া, ধামসোনা, পাথালিয়া, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, বিরুলিয়া, বনগাঁও ইউনিয়ন, সাভার সদর ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৭লাখ ৫৬ হাজার ৪১৬জন।
এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩লাখ ৬৮হাজার ৯৩৫ এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩লাখ ৮৭হাজার ৪৬৮জন। এছাড়াও হিজড়া সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছে ১৩জন।