বাংলা ভয়েস ডেস্ক :
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া একটি রোগ, যেখানে অস্থিমজ্জার কোষগুলি যথেষ্ট পরিমাণে নতুন রক্তকোষ (লোহিত, শ্বেত রক্ত কণিকা ও অণুচক্রিকা) উৎপাদন করে না, ফলে রক্তে এই কোষগুলির স্বল্পতা দেখা যায়। সাধারণত রক্তশূন্যতা বলতে কেবল লোহিত রক্তকণিকার অভাব বোঝালেও, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় তিন ধরনের রক্তকোষের (লোহিত, শ্বেত রক্ত কণিকা ও অণুচক্রিকা) উৎপাদনই হ্রাস পায়।
এটি কৈশোর ও কুড়ি বছরের লোকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে বয়স্কদের মধ্যেও এটি সাধারণ। এটি বংশগতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা রাসায়নিক, ঔষধ বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সংস্পর্শের কারণে ঘটতে পারে। তবে প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে এর কারণ নিরূপণ করা যায়নি।
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার কারণ
১. অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার প্রাথমিক কারণ হলো অস্থিমজ্জা স্টেম কোষকে আক্রমণ করে ইমিউন সিস্টেম। এতে অস্থিমজ্জার কোষগুলি যথেষ্ট পরিমাণে নতুন রক্তকোষ (লোহিত, শ্বেত রক্ত কণিকা ও অণুচক্রিকা) উৎপাদন করতে পারেনা।
২. বিভিন্ন ক্ষেত্রে, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া এর কারণ চিহ্নিত করা যায়না।
৩. বিভিন্ন শিল্পে বা কৃষিকাজে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক, কীটনাশক, সলভেন্ট (যেমন- অর্গানো ফসফেট কমপাউন্ড)-এর জন্য অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে।
৪. সাইটোটক্সিক জাতীয় ওষুধ যেমন ফিনাইটোইন, ক্লোরাম ফেনিকল, বেঞ্জিন, ইত্যাদি কারণেও এই অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।
৫. তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয় এমন যন্ত্র বা পদার্থের কাছাকাছি অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করলে হতে পারে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া।
৬. সাইটোমেগালভাইরাস, এপস্টাইন-বার, পারভোভাইরাস বি-১৯, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস এবং এইচ আই ভি ভাইরাস থেকেও হতে পারে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া।
৭. অটোইমিউন ডিজিজ-এর কারণেও হতে পারে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। এক্ষেত্রে দেহের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জাকে ধ্বংস করতে থাকে।
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার লক্ষণ
আক্রান্ত রোগীর শরীরে লোহিত রক্তকণিকার স্বল্পতার কারণে ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ততা, বুক ধড়ফড় করা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, মাথা ধরা, ক্ষুধামন্দা, চোখ, হাত-পা, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গে ভুগতে পারেন। শ্বেত রক্তকণিকার স্বল্পতায় আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণে ভুগতে পারেন। আর অণুচক্রিকার অভাবের কারণে রোগীর নাক ও মুখ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত রক্তপাত, ক্ষত, ত্বকে ছোট-ছোট র্যাশ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, মহাব্যবস্থাপক (মেডিকেল সার্ভিসেস), এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম