গাজার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বশির আবু আলশায়ের। ৪২ বছর বয়সি এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে নিজের ক্যামেরায় অবরুদ্ধ গাজার ভয়াবহ চিত্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন।
সাংবাদিকতাই ছিল তার রুটিরুজির একমাত্র ভরসা। কিন্তু ইসরাইলের অব্যাহত অমানবিকতায় তার পরিবার আজ চরম দারিদ্র্যে দিন কাটাচ্ছে। সন্তানরা ঠিকমতো খেতে না পারায় শেষ উপায় হিসেবে নিজের অতি প্রিয় ক্যামেরাটি বিক্রির ঘোষণা দেন বশির।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমার পোস্টটি কোনো প্রচারণা ছিল না; এটি ছিল একজন ডুবে যাওয়া মানুষের খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার আশা। এক টুকরো রুটি এখন স্বপ্নের মতো। আমি আমার বাচ্চাদের অনাহারে থাকতে দেখেছি, বাড়িতে কোনো খাবার অবশিষ্ট ছিল না। আমার ক্যামেরা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। আমার তৃতীয় নয়নের বিনিময়ে হলেও আমার সন্তানদের বাঁচাতে চাই।”
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, সেখানে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ বিপর্যয় এড়াতে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ লাখ ব্যাগ আটার প্রয়োজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ভিক্ষে ইতোমধ্যে ১৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও প্রবীণ। প্রতিদিন বাড়ছে অপুষ্টি ও ক্ষুধাজনিত অসুস্থতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা।
এই সংকটে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আরেক সাংবাদিক আহমেদ আবদেল আজিজ বলেন, “গাজার পরিস্থিতি অবিশ্বাস্য। ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে। সহায়তা কেন্দ্রগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।” নিজের পরিবারের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে তিনি মাইক্রোফোন বিক্রি করেছিলেন, কিন্তু সেই টাকা দিয়ে পরিবারকে মাত্র দুদিন চালানো সম্ভব হয়েছিল। এখন সেও নিজের ক্যামেরা বিক্রি করার কথা ভাবছেন।
আবদেল যোগ করেন, “আমরা শুধু যুদ্ধ নথিভুক্ত করি না—আমরা বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সরঞ্জাম বিক্রি করি।”
গাজায় এখন এক কেজি আটার দাম ১০০ শেকেল, প্রায় ২৯ ডলার। আয়ের কোনো উৎস না থাকায় এই খরচ সাধারণ মানুষের জন্য সম্পূর্ণ অসহনীয় হয়ে উঠেছে।


















