নিউজ ডেস্ক :
ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। মহামারী-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি এমনিতেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে। সেখানে সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করছে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। আগামী দিনগুলোতে এর নেতিবাচক প্রভাব আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জি২০ সদস্যদেশগুলোর নীতিনির্ধারকরা। খবর নিক্কেই এশিয়া।
মরক্কোর মারাকেশে ১২-১৩ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী বৈঠক করেছেন জি২০ সদস্যদেশগুলোর অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা। সেখানে যুদ্ধ ও সংঘাতে নিপীড়িত মানুষের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়। পাশাপাশি বৈঠককে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংঘাত ও রাজনীতি নিয়ে নয়।
জি২০ আন্তর্জাতিক আইন, আঞ্চলিক সীমা ও সার্বভৌমত্বের ওপর জোর দেয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জি২০ সদস্যরা একমত হয়েছিল। তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভাজন তৈরি হয় সংস্থাটিতে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো একদিকে এবং চীন ও রাশিয়া অন্যদিকে সিদ্ধান্ত দিত। এজন্য সিদ্ধান্ত নেয়া প্রায়ই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে সম্প্রতি বৈঠকে দীর্ঘদিন পর একমত হয় সদস্যদেশগুলো।বৈঠকের প্রধান ভারতীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘সেসব নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।’ তবে জাপানের অর্থমন্ত্রী শুনিচি সুজুকি মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘জাপানসহ অনেক দেশই ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। সমালোচনা জানিয়েছে রাশিয়ার অভিযানের।’
বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান অবস্থা সম্পর্কে জাপানের অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এটা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় আরো তীব্র হবে। এমনিতেই তীব্র আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সুদহার বৃদ্ধি একটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে হাজির হয়েছে। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য মুদ্রা, আর্থিক নীতি ও সুসংহত নীতিমালায় জোর দেয়া হয়েছে। বৈষম্য কমিয়ে এনে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
মারাকেশের বৈঠকটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সুদহার বাড়িয়েছে। জি২০ সদস্যদেশগুলোর অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য কঠিন সময়ের মধ্যে পড়েছে।চীনের শ্লথতার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। জি২০ সদস্যদেশগুলোর মধ্যেও রয়েছে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সংকট।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভাজন দেখা দিয়েছে ব্লকটিতে। সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে সম্মেলনে নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় কিছু বিষয়ে। সদস্যদেশগুলো সরাসরি রাশিয়ার সমালোচনা এড়িয়ে যায়। জি২০ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে জি৭ সদস্যদেশগুলোও রয়েছে। তারা রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরো তীব্র করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাশিয়ার এ যুদ্ধ খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন ইস্যু তৈরি করেছে। কারণ ইউক্রেনকে দীর্ঘদিন ধরেই শস্যের রফতানিকারক ধরা হয়। ইউক্রেনের শস্য আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে আফ্রিকা ও অন্যান্য মহাদেশের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বাড়তি চাপ তৈরি হওয়া। জি২০ শস্য সরবরাহের জন্য মধ্যস্থতা ও সরবরাহ চেইন নিরবচ্ছিন্ন করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্য ও সার আমদানি যেন ব্যাহত না হয়। তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় মস্কো এ বিষয়ে একটা চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। চুক্তি সই হলে ইউক্রেনের শস্যকে কৃষ্ণ সাগর হয়ে রফতানিতে বাধা দেবে না রাশিয়া।
ভারতের নেতৃত্বে সদস্যদেশগুলোর ঋণ ঘাটতির ঝুঁকি ও উন্নয়ন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। জি২০ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি থেকে শুরু করে ব্রাজিল, চীন, ভারত ও রাশিয়ার মতো অর্থনীতির দেশগুলো।