রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ফ্ল্যাটে মা ও মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বরিশালের নলছিটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন।
তিনি জানান, মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন গৃহকর্মীকে ঝালকাঠি–বরিশাল সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও তাকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং প্রকৃত হত্যার কারণ জানতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়া (১৫) কে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী আ.জ.ম. আজিজুল ইসলাম সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সোমবার সকাল ৭টার দিকে আজিজুল ইসলাম স্কুলে যাওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। পরে বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। বাসা থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যায়।
ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের পর একটি স্কুলড্রেস পরা নারী কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ভবন ত্যাগ করেন। চার দিন আগে “আয়েশা” পরিচয়ে বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া প্রায় ২০ বছর বয়সী ওই তরুণীকেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, অভিযুক্ত আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বেরিয়ে যান।
তদন্তসূত্র জানায়, ওই গৃহকর্মী নিজের আসল নাম ও ঠিকানা গোপন করেছিলেন এবং কাজ নিতে আসার সময় তার কাছে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না। পরে বাসা থেকে নেওয়া ফোনটি বাড়ি থেকে বেরিয়েই বন্ধ করে দেন তিনি। আশপাশের বেশিরভাগ সিসিটিভি ক্যামেরা অচল থাকায় তাকে শনাক্ত করতে পুলিশকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তদন্ত চালাতে হয়েছে।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি এবং নাফিসার শরীরে ৪টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন ওসি মেজবাহ উদ্দিন।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকালে মা-মেয়ের মরদেহ নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ বড়গাছা এলাকায় নেওয়া হয়। জোহরের নামাজের পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়।


















