টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শরীফা হকের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংবাদিকদের ফোন না ধরার অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদসংক্রান্ত বিষয়ে বারবার ফোন ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেন না বলে অভিযোগ করেছেন জেলার সাংবাদিকরা। শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ মানুষও বলছেন—জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে সংবাদকর্মী থেকে সাধারণ নাগরিক—সবাই রাষ্ট্রীয় সেবার নানা বিষয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংবাদ প্রস্তুতের সময় প্রশাসনের বক্তব্য নিতে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেন না। এমনকি অফিসে গেলেও দেখা পাওয়া দুষ্কর। ফলে বহু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য সংযুক্ত করা সম্ভব হয় না, যা সাংবাদিকদের পেশাগতভাবে বিপাকে ফেলছে।
এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি আহমেদ রাসেল বলেন, “তিনটি সংবাদের জন্য ফোন করেছিলাম, কিন্তু তিনি ধরেননি। এমনকি সাক্ষাৎকারের অনুরোধ জানালেও অনীহা প্রকাশ করেন।”
অন্যদিকে, অলক কুমার দাস নামের এক স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, “একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তার তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেন না, বার্তায় সাড়া দেন না, অফিসেও পাওয়া যায় না—এটি তথ্যের স্বচ্ছতা ব্যাহত করছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টেলিভিশন সাংবাদিক অভিযোগ করেন, “জেলা প্রশাসককে সরাসরি পাওয়া যায় না। বক্তব্য নিতে চাইলে পিএ’র মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয়। ইচ্ছে হলে তিনি বলেন, না হলে নয়। ঢাকার সচিবদের ফোনে পাওয়া যায়, কিন্তু জেলা পর্যায়ে অনেকে নিজেদের সর্বেসর্বা ভাবেন।”
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রেজাউল করিম বলেন, “জেলার সব সাংবাদিকই জানেন, তিনি ফোনে সাড়া দেন না। সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে, কিন্তু কারণ স্পষ্ট নয়।”
এ বিষয়ে জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, গুরুত্বপূর্ণ জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে শরীফা হককে আরও মিডিয়াবান্ধব আচরণ প্রদর্শন করা উচিত। তাদের মতে, প্রশাসন ও গণমাধ্যমের মধ্যে সহযোগিতা না থাকলে স্থানীয় সমস্যাগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয় না, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী।
অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ নাগরিকরাও প্রশাসনিক কাজে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, অফিসে গেলেও সচরাচর দেখা মেলে না, ফলে সেবাপ্রাপ্তিতে ভোগান্তি বাড়ছে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে টাঙ্গাইলকে ময়মনসিংহ বিভাগে যুক্ত করা হয়।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের মতামত জানতে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরেও একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল জেলার ৫৪ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শরীফা হক। তিনি ২৫তম বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা। এর আগে সেতু বিভাগের উপসচিব ও নীলফামারীর জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের ৪০তম জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন তিনি।