নিজস্ব সংবাদদাতা :
লক্ষ্মীপুরে নদী ভাঙ্গা আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তির বায়না চুক্তিতে মালিকানা ২৪ শতাংশের একটি সম্পত্তি জোর করে দখল করার অভযোগ এনেছেন হাজিরাহাট ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল দেলোয়ার হোসেন ও স্থানীয় সুলতান আহম্ম টিপুর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী এবং বাংলার মুকুল পত্রিকার নিউজের তথ্য অনুযায়ী জানা যায় লক্ষীপুর কমলনগর হাজিরাট হামিদিয়া ফাজিল
মাদ্রাসার মালিকানাধীন ৮০ শতাংশ জমিন রয়েছে তোরাবগঞ্জ এলাকায় চর লরেঞ্চ মৌজায়। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল দেলোয়ার হোসেন উক্ত জমিটি বেশ কয়েকজনের কাছে একাধিকবার বায়না চুক্তি করেছেন বলে অভযোগ ওঠে।
সম্প্রতি ওই জমির একটি অংশে ভরাট করে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে একটি পক্ষ। তবে একটি পক্ষ কাজ করলেও মাওলানা দেলোয়ার হোসেন কাজটি মাদ্রাসার বলে দাবি করেন। ঘটনাটি কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের তোরাবগঞ্জ গ্রামে। তবে জমিটি পড়েছে চর লরেঞ্চ মৌজাতে।
বায়না চুক্তির স্টাম্প এবং ভুক্তভোগীর বক্তব্য অনুযায়ী ২০২০ সালের ১ মে স্থানীয় সুলতান আহম্মদ টিপুর মাধ্যমে, আজাদ এবং মোহাম্মদ শাহজাহানের কাছ থেকে ২৪ শতাংশ জমির বায়না চুক্তি করে রাজ্জসক। দুই ধপায় সুলতান আহম্মদ টিপুকে ৮ লাখ টাকা ( ১ম স্টাম্প ৬লাখ এবং ২য় স্টাম্প ২ লাখ) দেয়া হয়। বাকি টাকা রেজিস্ট্রেশন সময় দেয়া হবে বলে চুক্তি করা হয়। সেই মোতাবেক আব্দুর রাজ্জাক এই জমিতে বিভিন্ন গাছপালা রোপন করে একটি বাড়ির পরিবেশ তৈরি করেন।
কিন্তু হঠাৎ করে ১৫ জুন (রবিবার) ২০২৫ আব্দুর রাজ্জাকের সেই বায়না চুক্তির মালিকানা জমিতে হাজিরহাট ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার বরাত দিয়ে উক্ত জায়গায় ইট বালু ফেলে জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ ওঠেছে মাওলানা দেলোয়ার ও টিপুর বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে আব্দুর রাজ্জাক হাজীর হাট ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল দেলোয়ার হোসেন এবং সুলতান আহমদ টিপুর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সাথে তিনি প্রশাসনের কাছে সুন্দর সমাধান এবং সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করেন।
ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি একজন নদী ভাঙ্গা মানুষ ২০২০ সালে আমি ২৪ শতাংশ জমি কিনেছি স্থানীয় সুলতান আহমদ টিপুর কাছ থেকে। আমাকে বায়না চুক্তি স্ট্যাম্প দেয়া হয় দুই ধপায় সুলতান আহমদ টিপুকে আমি ৮ লাখ টাকা দিয়ে প্রথম স্ট্যাম্পে ৬ লক্ষ টাকা এবং দ্বিতীয় স্টাম্পে ২ লক্ষ টাকা। যেখানে সাক্ষী ছিলেন হাজিরাট হামিদিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা দেলোয়ার হোসেন। ৫ বছর পর্যন্ত জমিনটি আমার দখলে ছিল। এই জমিন বায়না চুক্তিতে মালিক আব্দুর রাজ্জাক নামে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে জমিতে।
পাঁচ বছর পর জমির দাম যখন বেড়ে যায়, প্রিন্সিপাল মাওলানা দেলোয়ার হোসেন এবং সুলতান আহম্মদ টিপু যুক্তি করে আমাকে জমিন থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে তৃতীয় পক্ষ ইসমাইল নামে এক ব্যক্তির কাছে জমিনটি পুণরায় বিক্রি করে। বর্তমানে ইসমাইল সেই জমিন দখল করে ঘর তুলছে। সেখান থেকে আমাকে সরানোর জন্য হাজিরহাট ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার একটি সাইনবোর্ড দিয়ে রেখেছে। যাতে সবাই মনে করে এই জায়গায় মাদ্রাসার কাজ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্তের হাত থেকে বাঁচতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এ বিষয়টি জানতে হাজীর হাট ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ভয়েসকে বলেন, সম্পত্তিটি মাদ্রাসার সম্পত্তি মাদ্রাসার প্রয়োজনে এখানে মাদ্রাসার জন্য ঘর করা হয়। আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জমি বিক্রির বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিকের নির্দেশনা অনুযায়ী মাদ্রাসার জমিতে কাজ চলছে। আমাদের মাদ্রাসার জমিতে আমরা ঘর তুলছি। আব্দুর রাজ্জাক নামে আমি কাউকে চিনি না। তাকে জিজ্ঞেস করেন তার কাছে কি আছে? আমাদের মাদ্রাসার দলিল আছে।
এ বিষয়টি জানতে স্থানীয় সুলতান আহমদ টিপুর সাথে কথা বললে তিনি বাংলা ভয়েস কে বলেন, আপনার আগেও দুজন সাংবাদিক এসেছে আপনি তিন নম্বর। রাজ্জাক সাহেব এখন আবার আপনার কাছে গিয়েছে। আমি তাকে বলেছি তার টাকাটা ফেরত নেয়ার জন্য কারণ আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু অবশেষে ব্যর্থ হলাম কারণ সরকারি সম্পত্তি কখনো রেজিস্ট্রেশন করা যায় না। তিনি বলেন আমি এডিসিকে নিয়ে কয়েকবার মাদ্রাসাতে মিটিং করেছি কিন্তু সরকারি সম্পত্তি হস্তান্তর করা না যাওয়ার কারণে আমি তাকে ৬ লক্ষ টাকার স্ট্যাম্প দেয়া তার টাকাটা ফেরত নিতে বলছি। কিন্তু তিনি ছয় লক্ষ টাকা মানেন না।
পরবর্তীতে চিন্তা করলাম তিনি জমিতে মাটি ফেলেছেন এবং জমিনটা সাজিয়েছেন সেই দিক থেকে যদি ২০-৩০ হাজার ৫০ হাজার বেশি লাগে তারপরও আমি দিতে রাজি কিন্তু তিনি তা মানেন না। তবে ২ লক্ষ টাকা এবং ১ টি স্টাম্পের কথা তিনি অস্বীকার করেন।
মাদ্রাসার সম্পত্তি হস্তান্তর করা কতটুকু যৌক্তিক লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জে পি দেওয়ানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মাদ্রাসার সম্পত্তি কখনো হস্তান্তরযোগ্য নয় এবং কখনো বিক্রিযোগ্য নয়। বিশেষ প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের থেকে অনুমোদন নিতে হয় তবে অনেক ঝামেলা। হাজিরহাট হামিদিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার জমিন বিক্রয় সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান। তবে তিনি বিষয়টির সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এমন পরিস্থিতিতে উক্ত সম্পত্তিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।