মোবাশ্বের নেছারী, কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা :
দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নিজ এলাকায় একটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
এটি স্হাপন করে নিজের জায়গা জমির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ নানা উপায়ে লাভবান হবেন প্রতিমন্ত্রী ও তার কাছের লোকজন। এমন ষড়যন্ত্রের সত্যতা মেলায় পরিকল্পনা কমিশন বাতিল করেছে ৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন, পরিচালনা এবং অর্থ বরাদ্দের ব্যপারে জনগণের স্বার্থে কিনা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এরই ধরা পড়ে ‘কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী পিটিআই স্থাপন’ প্রকল্পটি। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু শুরু থেকেই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অভিযোগ ওঠে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয় তিন কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের আমলে এডিপি সংশোধনের জন্য প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। কিন্তু এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো টাকা খরচ হয়নি।
এ অবস্থায় ৪ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়। এটি পাওয়ার পর গত ১ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১৩ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পরিকল্পনা কমিশনকে দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,পিটিআইটি নির্মাণের লক্ষ্যে যে স্হান নির্বাচন করা হয় সেখানে উঁচু ও নিচু দুই শ্রেণির জমিই আছে।
পিটিআইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুরো চার একর জমি যদি উঁচু ধরা হয় তাহলে সর্বনিম্ন দাম হতে পারে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু জমির মূল্য দেখানো হয়েছে তিন কোটি ৯৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ধরা হয়েছিল দুই কোটি ৬৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও অন্তর্বর্তী সরকারের দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, এ প্রকল্পটি বন্ধ করাটা যৌক্তিক।
কেননা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এটি নিয়েছিলেন সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এ কারণে বন্ধের বিকল্প হয়তো পরিকল্পনা কমিশনে হাতে ছিল না। তবে শুধু বন্ধ করলেই হবে না। এর শুরু থেকে যারা যুক্ত ছিলেন সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে।
তিনি আরও জানান, পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি বাতিলের মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রকল্পটিতে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছিল। কাজেই এর সঙ্গে যুক্ত সাবেক ওই প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সহযোগী এবং প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন পর্যন্ত যারা যুক্ত ছিলেন তাদের সবাইকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।


















