ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ নির্দেশনা প্রদান করেন।
ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পর রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ আদেশ দেন।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অপর ১৬ জনের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, এম এ এন সিদ্দিক, মো. ফারুক জলিল, মোহাম্মদ শফিকুল করিম, মোহা. ফিরোজ ইকবাল, ইবনে আলম হাসান, মো. আফতাব হোসেন খান, মো. আব্দুস সালাম, মনির-উজ-জামান চৌধুরী, সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবালের নামও রয়েছে তালিকায়। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সংস্থার সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান শেখ আদালতে আবেদন করে বলেন, সংশ্লিষ্ট আসামিরা দেশত্যাগ করলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন বন্ধ করা প্রয়োজন।
আবেদনে বলা হয়, একক উৎসভিত্তিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডকে পাঁচ বছরের জন্য মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি সার্ভিস চার্জ হিসেবে আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ (ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত) হারে বিল গ্রহণ করে, যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এতে সরকারের প্রায় ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, আগের দরপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল করে কেবল সিএনএস লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে চুক্তিটি করা হয়। এতে সার্ভিস চার্জের নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্ধারণ না করে শতকরা হার নির্ধারণ করা হয়, যা সরকারের জন্য বড় আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গত ১২ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১–এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদক আরও জানায়, সিএনএস লিমিটেডের পরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যদের যোগসাজশেই এই অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাসহ ভারতে চলে যান। দলের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতার সেখানেই অবস্থানের খবর পাওয়া যায়।
এরই মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমন চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১৭ নভেম্বর এ রায় ঘোষণা করেন। একই মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। তবে পুলিশের সাবেক প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে পাঁচ বছরের লঘুদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানায়। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার বিষয়েও ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।


















