ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের ইছামতী নদীর উজানের পানিতে যশোরের শার্শা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫ টি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রতিদিন হুহু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বসতবাড়ি, রান্নাঘর ও গবাদিপশুর খামারে পানি ডুকে যাওয়ার কারণে চরম মানবতার সাথে জীবন যাপন করছে হাজারও মানুষ। দীর্ঘদিন পানিবন্দি হওয়াতে কর্মহীন মানুষেরা ভুগছেন খাদ্য সংকটে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামমাত্র কিছু খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হলেও অধিকাংশ পানিবন্দি মানুষ আছেন খাদ্য সংকটে।
শার্শা উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের অধিকাংশ অঞ্চল এখন পানির নিচে। বন্যায় বসতঘর, রান্নাঘর, গবাদিপশুর খামার, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বাজারে দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরের ভেতর পানি উঠায় কিছু কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউসধান ও গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির।
শার্শা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আক্রান্ত ইউনিয়ন গুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ও পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
এদিকে দিন যত বাড়ছে পানি তত বৃদ্ধি হওয়াতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আবহাওয়া দফতরের সতর্কীকরণ অনুযায়ী আগামী দুইদিন খুলনা বিভাগসহ যশোর এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে শার্শায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে।
জানা গেছে, এ মাসের প্রথম থেকে অবিরত হালকা-ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার বাগআঁচড়া, কায়বা, উলাশী, গোগা ও পুটখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বসতবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। এছাড়া এ সব ইউনিয়নের কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পানিতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় উজানের পানিতে উপজেলার রুদ্রপুর, কায়বা, ভবানিপুর, গোগা, আমলাই, সেতাই, বসতপুর, কন্যাদাহ, পুটখালী, খলসি, বারোপোতা গ্রামের মাঠঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠেছে। এতে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরে থাকতে না পেরে অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাগআঁচড়া ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি। সবমিলিয়ে ৫ শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উলাশী ইউনিয়নে কন্যাদাহ, রামেডাঙ্গা ও নারানতলা পড়ার প্রায় ২৫০ টি পরিবার গত দেড় মাস যাবত পানিবন্দি। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ সব গ্রামের মানুষের জীবন প্রায়ই অচল। এরইমধ্যে ২০ টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। গোগা ইউনিয়নে প্রায় ১৩শ পরিবার পানিবন্দি আছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বীপক কুমার সাহা জানান, টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় ইছামতী নদী উজানের পানিতে ৪০০ হেক্টর আউশ ধান এবং গ্রীস্মকালীন শাক-সবজি পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়াও ৬০০ হেক্টর জমি পানির নিচে থাকায় রোপা আমন চাষ না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি আরো বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান জানান, আগে থেকেই পানিবন্দি এলাকার স্কুলগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রবিবার রাত পর্যন্ত উলাশী, বাগআঁচড়া ও কায়বা ইউনিয়নের কয়েকটি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের সার্বিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।