বাংলা ভয়েস ডেস্ক :
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর দিয়ে গোপনে ভারতে পালিয়ে যান। তাঁর পালিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। জাতির সামনে এই প্রথম আসে হাসিনার গোপন পলায়নের দৃশ্য।
এই ভিডিও কে তুলেছেন? কে প্রকাশ করেছেন? এ নিয়েই শুরু হয় এয়ার ইন্টেলিজেন্সের গোপন তদন্ত।
সূত্র জানায়, কুর্মিটোলা এয়ারবেইসের অফিসার্স মেসের একটি কক্ষের জানালা থেকে ভিডিওটি ধারণ করেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রিফাত আশরাফী। সামাজিক মাধ্যমে এটি পোস্ট করেন বিমান বাহিনীর আরেক কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহসিফ সুরি। দুজনকেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তে আরও উঠে আসে বিস্ময়কর তথ্য—এই ভিডিও ট্র্যাক করতে গিয়ে ধরা পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ভেতরে গড়ে ওঠা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর নেটওয়ার্ক। মূল অভিযুক্ত স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ, যিনি ‘র’-এর সক্রিয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। তাকে ডিজিএফআই ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তার করে। তার গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ভারতীয় কমান্ডো ব্যবহৃত অস্ত্র, নগদ টাকা ও ডিভাইস। আদালত তাকে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে ১০ বছরের সাজা দেন। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেলে বন্দি।
এয়ার ইন্টেলিজেন্সের তদন্তে ধরা পড়ে বিমান বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের আরও ছয় কর্মকর্তা ‘র’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এরা হলেন:
• এয়ার ভাইস মার্শাল এম এ আউয়াল হোসেন
• এয়ার ভাইস মার্শাল জাহিদুল সাঈদ
• এয়ার কমডোর মোহাম্মদ আমিনুল হক
• গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক
• গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শামীম
• উইং কমান্ডার সাইয়েদ মোহাম্মদ
তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তবে আইএসপিআর দাবি করেছে, এসব কর্মকর্তা “স্বাভাবিক” অবসরে গেছেন।
তদন্তে উঠে এসেছে পুলিশ বিভাগেও ‘র’-এর প্রভাব। ‘পারমানেন্টলি সাসপেন্ড’ করা হয়েছে ৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে:
• ডিএমপির মিরপুর জোনের ডেপুটি কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লাহ
• গুলশান ডিভিশনের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার রফিকুল ইসলাম
• ট্রাফিক এডিসি তানজিল আহমেদ (যাত্রাবাড়ী)
• এপিবিএন-এর এএসপি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
এদের নেতৃত্বে ছিলেন গুলশান ডিবি জোনের সহকারী কমিশনার ইফতেখার মাহমুদ, যিনি সরাসরি স্কোয়াড্রন লিডার আলতাফের বন্ধু এবং ‘র’-এর স্টেশন মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়, যদিও এটি প্রথমে গোপন রাখা হয়।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার পলায়নের ভিডিও ধারণ করার পেছনে কৌশল ছিল ভিন্ন—তার পালানোর রুটকে ভিন্নভাবে দেখাতে হেলিকপ্টার পালানের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা হয়, কিন্তু বাস্তবে তিনি সি-১৩০-জে বিমানযোগে সাতক্ষীরা হয়ে দিল্লি যান।
এই পুরো ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা কাঠামোয় একটি গভীর অনুপ্রবেশের বার্তা দেয়। সামরিক বাহিনীর ভেতরে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এই নেটওয়ার্কের উপস্থিতি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা।


















