শাহ আলম সরকার :
টাঙ্গাইলের মধুপুরে ১১ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট লিখে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন এক নারী শিক্ষক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর মারা যান তিনি।
সুইসাইড নোটে এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে প্রেমের সম্পর্কের অপব্যবহার, প্রতারণা ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন নিহত শিক্ষিকা।
মারা যাওয়া শিক্ষিকার নাম লাকী (২৮)। তিনি মধুপুর উপজেলার কেওটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামে। পিতা কৃষক আব্দুল লতিফের বড় মেয়ে লাকী ইডেন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি বিদ্যালয়টিতে যোগ দেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুন (মঙ্গলবার) রাতে লাকী কীটনাশক পান করেন। পরদিন তাকে প্রথমে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুন (শুক্রবার) দুপুরে তিনি মারা যান।
লাকীর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার লেখা ১১ পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট ভাইরাল হয়, যা তিনি তার সহকর্মী মধুপুর গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইবনে মাসুদ রানার উদ্দেশ্যে লেখেন। মাসুদ উপজেলার সাথীহল মোড় এলাকার শামছুল হক ওরফে সোনা মিয়ার ছেলে এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সুইসাইড নোটে মর্মস্পর্শী অভিযোগ : লাকী তার সুইসাইড নোটে লেখেন,
“পৃথিবীতে মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো… তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম, ভালোবেসেছিলাম। তুমি আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেছো, পরে প্রত্যাখ্যান করেছো। আমার মৃত্যুর জন্য তুমিই দায়ী।”
তিনি আরও লেখেন,
“তুমি চাইলে ধর্ষণ মামলা করতে পারতাম। বিয়ের জন্য চাপ দিতে পারতাম। কিন্তু আমি বেঁচে থেকে এসব দেখে যেতে পারব না।”
লাকীর দাবি, মাসুদ ইচ্ছা করেই তাকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েই তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। তার মৃত্যুর আগে লেখা সুইসাইড নোটে আরও উল্লেখ ছিল,
“তুমি জানো আমি দুর্ঘটনা ঘটাবো, তবুও ঠেকাওনি। আমি এখন পোকার ওষুধ খেতে যাচ্ছি… আমার মৃত্যুর জন্য তুমিই দায়ী।”
কেওটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা খাতুন বলেন,
“লাকী ছিলেন খুবই মেধাবী ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক। তার এমন মৃত্যু আমাদের শোকাহত করেছে। আমরা ইবনে মাসুদ স্যারের সঙ্গে তার কেবল দাপ্তরিক সম্পর্ক বলেই জানতাম।”
অন্যদিকে, গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খান জানান,
“ইবনে মাসুদ রানা রোববার থেকে তিন দিনের ছুটিতে রয়েছেন। ছুটির আবেদন তার স্ত্রীর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিস্তারিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেই জেনেছি।”
লাকীর বাবা আব্দুল লতিফ বলেন,“আমি গরিব কৃষক মানুষ। অনেক কষ্টে মেয়েকে ইডেন কলেজে পড়িয়েছি। বাড়ির কাছে চাকরি পেয়েছিল, খুব খুশি ছিলাম। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন সইলো না। মেয়েকে খুন করে ফেলেছে মাসুদ। আমি তার বিচার চাই।” তিনি জানান, মেয়ের মৃত্যুর পর বিস্তারিত জানতে পেরে ইবনে মাসুদ রানাকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এই বিষয়ে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল কবীর বলেন,
“নিহত লাকীর বাবা আব্দুল লতিফের দায়ের করা মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”