মো: ইব্রাহিম খলিল, সাতক্ষীরা সংবাদদাতা :
এখান থেকে বের হন “গেট লস্ট ফ্রম হিয়ার” তথ্য চাওয়া প্রসঙ্গে এভাবেই সাংবাদিকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং অপমান, অপদস্ত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে।
গত (১৯ জুন) বৃহস্পতিবার দুপুর ২.১২ মিনিট সময় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা (এলজিইডি) অফিসে ওই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। এলজিইডি প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী ও সাংবাদিকদের কথোপকথনের এক ভিডিও ফুটেজে ঘটনার সত্যতা মেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ তুলে বলেন: সাতক্ষীরা সদর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী যোগদানের পর থেকে বেড়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) হলো: বাংলাদেশ সরকারের একটি সাংগঠনিক অধিদপ্তর। মূলত স্থানীয় সরকারের আওতাভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন তৈরির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন পরিকল্পনা, রাস্তা নির্মাণ সহ অন্যান্য সংস্কার কাজে তদারকি এবং সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ সরকার এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারের এই মহতী উদ্যোগ ভেস্তে দিচ্ছে কিছু সংখ্যক উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী।
নির্দিষ্ট প্রাক্কলন অনুযায়ী রাস্তা নির্মাণ, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ ও সংস্কার কাজে সঠিকভাবে তদারকির দায়িত্ব পালন না করে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির আশায় বশীভূত হয়ে ঠিকাদারদের নিকট থেকে বড় অঙ্কের ঘুষ আদায় করে থাকেন। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি সাতক্ষীরা সদর (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর ক্ষেত্রে। অভিযোগ আছে, সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা থেকে ৫ পারসেন্ট হারে ঘুষের বিনিময়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী রাস্তা নির্মাণ কাজ, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ভবন নির্মাণ কাজ সহ সংস্কার কাজে দেখভাল ও তদারকির ক্ষেত্রে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
এছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শতভাগ কাজ কিংবা আংশিক কাজ শেষ না হতেই ঘুষ নিয়ে টাকা ছাড় করার সুপারিশ করে থাকেন প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন সময় পত্রিকায় একের পর এক শিরোনাম হয়েছেন উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী।
প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর এসব অনিয়ম, অপকর্ম ও দুর্নীতির কারনে সিডিউল অনুযায়ী টেকসই রাস্তা নির্মাণ, টেকসই ভবন নির্মাণ সহ সংস্কার কাজ যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না। সেকারণে ঝুঁকিতে পড়েছে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের অনেক কাজ।
জানা গেছে, গত ০৪-১২-২২ ইং তারিখ ইয়াকুব আলী সাতক্ষীরা সদর (এলজিইডি) অফিসে উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। একাধারে একই কর্মস্থলে আড়াই বছরের অধিক সময় ধরে বহালতবিয়তে আছেন দুর্নীতিবাজ ইয়াকুব আলী।
বিশেষজ্ঞদের মতে: দীর্ঘ সময় ধরে একই কর্মস্থলে থাকার কারণে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকার কারণে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
এছাড়া বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজে তদারকির ক্ষেত্রে তৈরি হয় গভীর সম্পর্ক। সেকারণে এসব কর্মকর্তা আর কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। একই কর্মস্থলে বেশি দিন থাকার কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী। সাতক্ষীরা সদর (এলজিইডি) অফিসে বেড়েছে নানা অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতি আর ঘুষ নৈরাজ্য। টাকা ছাড়া নড়ে না কোন ফাইল।
প্রসঙ্গত: সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের মেইন গেট সংলগ্ন ড্রেন নির্মাণ কাজ, শিশু পার্কের প্রাচীর মেরামত সহ উপজেলা ইউএনও বাসভবনের স্টেইননলেস স্টিল সিড়িঁ নির্মাণ কাজে সরকারি ভাবে বরাদ্দ আসে ২২ লক্ষ পনের হাজার ৩২০ টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯মে থেকে কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান– এম,এ, রব শাহীন।
স্থানীয়দের অভিযোগ কাজের শুরু থেকেই নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। সরেজমিনে যেয়ে, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পায় দায়িত্বরত সাংবাদিকরা। এর প্রেক্ষিতে গত ১৯জুন দুপুরে তথ্য নিতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা (এলজিইডি) অফিসে যান, ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমাদের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক যশোর বার্তা, পত্রিকার সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন, দৈনিক অভয়নগর, যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রতিদিনের কণ্ঠ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক অনির্বাণ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মো: ইব্রাহিম খলিল।
এসময় উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর সাথে (এলজিইডি) অফিসে সরাসরি আলাপকালে উল্লেখিত কাজের ধরন, প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত ব্যায়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্য দিতে পারবো না। আপনারা তথ্য নিয়ে আমাকে ফাঁসাবেন। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, অনেক সাংবাদিকরা আমার এখানে আসে যায়, কথা বলে সমাধান হয়, আপনারা কেন তথ্য চাইছেন।
প্রতিউত্তরে সাংবাদিকরা বলেন: আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে তথ্য লাগবে, আর আমরা কেন আপনাকে ফাঁসাবো। একপর্যায় প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী সাংবাদিকদের বলেন: আপনারা তথ্য ফরমে আবেদন করেন। সাংবাদিকরা সাড়া দিয়ে তথ্য ফরামে অবেদন করতে সম্মতি হন এবং রীতিমতো তারা তথ্য ফরামে অবেদন করে জমা দিতে চাইলে প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন: এখান থেকে বের হন “গেট লস্ট ফ্রম হিয়ার”। আপনাদের কোন তথ্য দেওয়া হবে না।
সরকারি একজন কর্ককর্তার এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন সাংবাদিকরা। ওই সময় সাংবাদিকরা বলেন, আমরা নিয়ম মেনে তথ্য ফরামে আবেদন জমা দিতে চাচ্ছি আপনি এভাবে আমাদের অপমান অপদস্ত করতে পারেন না। তথ্য ফরম জমা না নিয়ে ইয়াকুব আলী বলেন: আপনারা কি এক জিনিস পাইছেন তথ্য ফরম। তথ্য ফরম নিয়ে আপনারা আমাকে ব্লাকমেল করবেন। সাংবাদিকরা বলেন: আপনাকে কেন ব্লাকমেল করবো? কাজ সঠিকভাবে হলে তথ্য দিলে সমস্যা কোথায়?
উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী নানা ভাবে সাংবাদিকদের অপমান অপদস্ত এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন যা একজন সরকারি কর্মকর্তার বিধিবহির্ভূত এবং গর্হিত কাজ।
এ বিষয় এলজিইডি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা তথ্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাথে গর্হিত আচরণ মোটেও কাম্য নয়। সাংবাদিকদের সাথে তার ভালো ভাবে কথা বলা উচিত ছিলো। তিনি আরও বলেন, কাজ যদি সঠিকভাবে হয় তাহলে তথ্য সরবরাহ করতে অসুবিধা কোথায়।
এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী কর্তৃক সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং গর্হিত কাজ করায় ক্ষোভে ফুসে উঠেছে সাতক্ষীরার কর্মরত সাংবাদিক মহল।
সাংবাদিকরা রীতিমতো এখন ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।