বাংলা ভয়েস ডেস্ক :
গানভিত্তিক দেশের একমাত্র বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন ‘গান বাংলার’ মালিকানা দখলের অভিযোগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস ও চেয়ারম্যান তার স্ত্রী ফারজানা মুন্নীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গুলশান থানায় সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন বলে থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মোক্তার জানিয়েছেন।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন- রবি শংকর মৈত্রী, এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান), সৈয়দ নাবিল আশরাফসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪ জন।
এসআই মোক্তার বলেন, “গুলশান থানায় গত ৩ ডিসেম্বর মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে আদালতে পাঠালে ঢাকার মহানগর হাকিম শরীফুর রহমান মামলাটি গ্রহণ করেছেন।
“এছাড়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আগামী ১ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন বিচারক।”
এসআই মোক্তার জানিয়েছেন, এর আগে গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম ছানাউল্ল্যাহর আদালতে সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ মামলার আবেদন করেছিলেন। তখন আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে গুলশান থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দেয়।
আদালতের আদেশে বলা হয়, “সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির হয়ে অভিযুক্ত কৌশিক হোসেন তাপস, ফারজানা মুন্নী, রবি শংকর মৈত্রী, এম. আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান) এবং সৈয়দ নাবিল আশরাফদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩৬৫/ ৩৪৬/৩৪৭/ ৩৯৫/ ৪২৭/৪০৩/৩২৬/৩০৭/৫০৬/১০৯ / ১১৪/৩৪ ধারায় একটি নালিশি দরখাস্ত করেছেন।
নালিশি দরখাস্ত বিষয়ে বিজ্ঞ কৌঁসুলিসহ অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনলাম। নালিশি দরখাস্ত ও নালিশি দরখাস্তের সাথে দাখিলকৃত কাগজাদি পর্যালোচনা করলাম। সার্বিক পর্যালোচনায়, নালিশি দরখাস্তখানাকে এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করার জন্য অফিসার ইনচার্জ, গুলশান থানাকে নির্দেশ প্রদান করা হল।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই হারুনর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি এখন তদন্তাধীন আছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব।
সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ মামলায় অভিযোগ করেছেন, তিনি ২০১১ সালের ২৫ জুলাই মো. বদরুদ্দোজা সাগর, বখতিয়ার শিকদার ও রবি শংকর মৈত্রী মিলে প্রাইভেট স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠার জন্য বার্ডস আই ম্যাস মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন পিএলসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নেন।
কোম্পানি গঠনের সময় মামলার বাদী ৭ হাজার প্রাথমিক শেয়ার এবং বখতিয়ার শিখদার, রবি শংকর মৈত্রী ও বদরুদ্দোজা সাগর প্রত্যেকে ১ হাজার করে সর্বমোট ১০ হাজার শেয়ার নেন, যার প্রাথমিক মূলধন ১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর সৈয়দ শামস বার্ডস আই মাস মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন পিএলসির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং গান বাংলা স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল (প্রস্তাবিত) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় আমানুল্লাহ খানের বাসায় যান।
আসামি রবি শংকর ও এম আমানুল্লাহ খানের (চঞ্চল খান) অনুরোধে তিনি ওই বাসায় গিয়েছিলেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, আনুমানিক রাত ৮টার দিকে আসামি কৌশিক হোসেন তাপস, ফারজানা মুন্নী, সৈয়দ নাবিল আশরাফসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন কিছু কাগজ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন।
“ এবং কোশিক হোসেন তাপস ও সৈয়দ নাবিল আশরাফের হাতে থাকা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ফিল্মি কায়দায় সকল আসামির সহযোগিতায় সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ ও মো. বদরুদ্দোজা সাগরকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে বলে।”
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, “আটকাবস্থায় আসামিদের কথাবার্তায় বাদী বুঝতে পারেন যে, আসামিরা বার্ডস আই ম্যাস মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন পিএলসি নামীয় কোম্পানিতে বাদী ও বদরুদ্দোজা সাগরের ৮ হাজার শেয়ারের মালিকানা আত্মসাৎ করবে। এক পর্যায়ে বাদী ও মো. বদরুদ্দোজা সাগর প্রাণনাশের ভয়ে ভীত হয়ে প্রাণে বাঁচতে কাগজে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর নেওয়ার পর আসামিরা বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর গ্রহণের বিষয়ে কারো কাছে কোনো তথ্য কাশ করলে তৎকালীন প্রশাসনকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে মামলায় জড়াবে এবং প্রয়োজনে জীবন শেষ করে দিবে বলে হুমকি দেয়।
“পরবর্তীতে বাদী ২০১১ সালের ২৫ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় একটি জিডি করে আসামিদের ভয়ে দেশের বাইরে চলে যান। বাদী দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় এবং বর্তমানে দেশে আইনের শাসন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় সাক্ষীদের সাথে আলোচনা করে আদালতে মামলা দায়েরে বাধ্য হন।”
মামলার বিষয়ে আসামি ফ্রান্সে বসবাস করা রবি শংকর মৈত্রী মোবাইল ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া এবং মিথ্যা। একই মামলা দুবার হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বাদীর নামে এবং ভিন্ন ভিন্ন তারিখে। তাপস আর মুন্নী গান বাংলায় যুক্ত হয়েছে ২০১২ সালের জুলাই মাসে। এই মর্মে আগেও একবার শুধু আমার আর চঞ্চল খানের নামে সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদ মামলা করেছিল।”
তিনি বলেন, “আমি আর কোনোদিন দেশে ফিরব না। শুধু গান বাংলা টিভির উদ্যোক্তা হয়ে আমি আমার দেশকে হারিয়েছি। আমি ফ্রান্সে ভালো আছি। আমার আর ওসব বলতে ভালো লাগে না। তবু আমি সত্য উদঘাটনের জন্য একদিন লাইভে সবটা বলব। বিশ্বাস করানোর দায় আমার নয়।”
এ বিষয়ে কথা বলতে ফারজানা মুন্নী, এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান), সৈয়দ নাবিল আশরাফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
আর মামলার মূল নম্বর আসামি কৌশিক হোসেন বর্তমান ইশতিয়াক হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
গত ৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাপসকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আছেন। এর মধ্যে তাকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।